সাথী প্রামানিক, পুরুলিয়া, ১১ সেপ্টেম্বর: পুজোর মুখে রক্ত সংকট দেখা দিয়েছে পুরুলিয়ায়। নির্দিষ্ট সময়ে প্রয়োজন মতো রক্তদান শিবির না হওয়ায় চাহিদা আর যোগানের ভারসাম্য নস্ট হয়েছে। পুজো আবহে এই ধরনের শিবির একেবারেই না হওয়ার ধারা চললে ভয়ংকর পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালের মধ্যে অবস্থিত জেলা ব্লাড ব্যাংকের এই পরিস্থিতি এখন। চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে কর্তৃপক্ষের। দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাংক সূত্রে জানা গিয়েছে আজ পর্যন্ত এ পজেটিভ এবং এবি পজেটিভ রক্তের প্রচুর চাহিদা রয়েছে অথচ যোগান অনেকটাই কম রয়েছে। ফলে দারুণ সমস্যায় পড়েছে তারা। এর মধ্যে ৩৫০ র বেশি সংখ্যায় রয়েছে থ্যালাসেমিয়া রোগী। মেডিকাল অফিসার ডা॰ সান্ত্বনা দত্ত বলেন, “এখন থেকেই রক্তের সংকট দেখা দিয়েছে। প্রয়োজন মতো শিবির না হওয়ায় এমন পরিস্থিতি হয়েছে। দুর্গাপূজার পর থেকে কালীপুজোর আগে আরও ভয়ংকর পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে।” এর সঙ্গে ওই স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “মেডিক্যাল কলেজ হওয়ার পর থেকে চাহিদা বেড়ে যায় অথচ, রক্তের যোগান নেই। যে সব ব্যবস্থাপক রয়েছে তাদের মধ্যে সমন্বয় করে ক্যালেণ্ডার করে রক্তদান শিবির নিয়মিত হলে এই সমস্যা চিরন্তন হত না।” এই প্রস্তাব অবশ্য ব্লাড ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে আগে একাধিকবার পাঠিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। বাস্তব রূপ পায় নি। যদিও প্রায় সারা বছর শিবিরের আয়োজন করে থাকে বেশ কয়েকটি সমাজসেবি সংস্থা, পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘ফাইট ফর পুরুলিয়া’ নামে সমাজ সেবি সংস্থা। আজকেও ব্লাড ব্যাংকের কাছে একটি শিবিরের আয়োজন করে তারা। প্রয়াত জিতেন্দ্রনাথ বটব্যালের স্মৃতিতে আয়োজিত ওই শিবিরে চল্লিশের বেশি ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করে ব্লাড ব্যাংক কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয় তারা। তবে আক্ষেপের সঙ্গে ওই সংস্থার সভাপতি সন্দীপ গোস্বামী বলেন, “ব্লাড ব্যাংকের পরিকাঠামোগত প্রচুর ত্রুটি রয়েছে। কর্মী, টেকনিশিয়ান অবসরের পর আর নিয়োগ হয় নি। চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের দিয়ে রক্তদান শিবিরের কাজ হচ্ছে। উত্সাহ দেওয়ার জন্য তেমনভাবে পাশে থাকে না ব্লাড ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ব্লাড ব্যাংক কর্তৃপক্ষ একটা বোতল রক্তদান করতে গেলে ২৫ টাকার টিফিন দেয় রক্তদাতাকে। এতে কী শিবির আয়োজন করতে পারবে রুগ্ন সংস্থা, সংগঠন বা ক্লাবগুলো? রক্তদাতাদের সংখ্যা বাড়ার জায়গায় কমবে বৈকি।” আজকের শিবিরের উদ্বোধক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক দেবাশীষ ব্যানার্জি, অতিথি হিসেবে থাকা সমাজ সেবি পার্থ প্রতীম বানার্জি, অজিত অগ্রওয়াল, প্রাক্তন পুর প্রধান বিনায়ক ভট্টাচার্য একবাক্যে বলেন, “রক্তসংকট মেটাতে শিবিরের আয়োজন করার জন্য সবাইকে উত্সাহিত করতে হবে। সবাইকে একযোগে সেবার মনোভাব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। কারণ রক্তের বিকল্প কিছুই নেই।”