সাথী প্রামানিক, পুরুলিয়া, ২১ নভেম্বরঃ তৃণমূলের হাতছাড়া হল ঝালদা পৌরসভা। ১২ আসন বিশিষ্ট ঝালদা পৌরসভা দখল নিল কংগ্রেস। আজকের তলবি সভায় আস্থা ভোটের পক্ষে থাকলেন কংগ্রেসের ৫ জন কাউন্সিলার এবং ২ জন নির্দল কাউন্সিলার। এদিনের তলবি সভায় অনুপস্থিত থাকলেন তৃণমূলের ৫ জন কাউন্সিলার। তলবি সভা শেষে ঝালদা পৌরসভা অফিস কক্ষ থেকে বেরিয়ে এলেন কংগ্রেস ও নির্দলের ৭ জন কাউন্সিলার। তলবি সভা শেষে ঝালদা পৌরসভা অফিস কক্ষ থেকে বেরিয়ে কংগ্রেসের কাউন্সিলার বিপ্লব কয়াল বলেন, “এদিনের সভায় তাকেই সভাপতি বলে মনোনীত করা হয়। তৃণমূলের পৌরপ্রধান, উপপৌরপ্রধান বা কোন কাউন্সিলার উপস্থিত হওয়ায় তারা এক তরফা ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে বর্তমান পৌরপ্রধান সুরেশ আগারওয়ালকে অপসারিত করেন। এই সংক্রান্ত রিজল্যুশনের কপি তারা নির্দিষ্ট জায়গায় পাঠিয়ে দেবেন বলে জানান তিনি। এদিন এই তলবি সভার সিদ্ধান্ত নিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে চাননি তৃণমূলের কোন কাউন্সিলার। জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া শুধু বলেন, “একটা অনাস্থার তলবি সভা হয়েছে। পুরবোর্ড এখনো গঠন হয়নি। পুরো বিষয় নিয়ে ঝালদার দলিয় নেতৃত্বের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হবে। ” এই প্রসংগে জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো বলেন, ঝালদায় তৃণমূলের পুরোবোর্ডের পতন হয়েছে। এরপর কংগ্রেসের নেতৃত্বে হবে নতুন পুরবোর্ড। নিয়ম মেনে এই কাজ না হলে বা প্রশাসন বাধা দিলে আবার আদালতের দারস্থ হবেন তারা। নির্দল প্রার্থী শিলা চ্যাটার্জি ফলাফলের দিনই তৃণমূলে যোগ দেন। মূলত তাঁর সমর্থন নিয়ে ৫ এপ্রিল প্রথমবার ঝালদা পুরসভায় ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। পুর প্রধান হন সুরেশ আগরওয়াল। পরবর্তীকালে শিলা তৃণমূল দল ত্যাগ করলে কংগ্রেস সহ বিরোধী শক্তি বেড়ে যায়। ১৩ অক্টোবর ঝালদার তৃণমূল পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন কংগ্রেসের পাঁচ ও নির্দলের এক কাউন্সিলর অর্থাৎ মোট ছয় জন। এর ১৫ দিনের মধ্যে তলবি সভা ডাকেননি। ফলে উপ-পুরপ্রধান তাঁর সময়সীমার একেবারে শেষের দিকে ২১ নভেম্বর তলবি সভা ডাকেন। কিন্তু সেই সভা বৈধ নয় বলে দাবি করেন অনাস্থা আনা কাউন্সিলররা। পালটা তাঁরাও তলবি সভা ডাকেন। দু’পক্ষই তলবি সভা ডাকার ঘটনায় প্রশাসন চুপ থাকায় শাসক ও বিরোধীদের বিবাদ গড়ায় আদালতে। বিরোধী কাউন্সিলরদের জারি করা নোটিস খারিজের আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ঝালদা পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সুদীপ কর্মকার। বিরোধী কংগ্রেস কাউনসিলরদের ৪ নভেম্বরের জারি করা নোটিশ খারিজ করেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা। তার পর ফের ৯ নভেম্বর উচ্চ আদালতে যান কংগ্রেস কাউন্সিলররা। সেখানে ২১ তারিখই তলবি সভার দিন স্থির রাখে হাই কোর্ট। বিরোধীরা সভায় উপস্থিত থাকার জন্য হাই কোর্টের রক্ষা কবচ পান।এখন কংগ্রেসের বোর্ড গড়ার জন্য মহকুমা শাসকের নোটিশের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। আজ সকাল থেকেই ঝালদা পৌরসভাকে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলে জেলা পুলিশ। তলবি সভা তাই অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সকাল থেকেই ঝালদা পৌরসভাকে নিরাপত্তার বেষ্টনীতে রাখা হয়েছিল। পুলিশের পদস্থ জেলা আধিকারিকরা ছাড়াও ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী। পৌরসভার ২০০ মিটার এলাকায় জারি ছিল ১৪৪ ধারা।