ঘনবসতি এলাকায় কয়লার রেল সাইডিং,দূষণে জেরবার স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পুলিশ

0
65

নিজস্ব প্রতিনিধি,বাঁকুড়াঃ কাঁচা রাস্তার একদিকে রেল সাইডিং। সেই রাস্তায়  দিনরাত ডাম্পার বোঝাই হয়ে কয়লা এনে জড়ো করা হয় রাস্তার পাশে। সেখান থেকেই রেকে বোঝাই হয়ে কয়লা চলে যায় অন্যত্র। সাইডিং থেকে কালো কয়লার গুঁড়ো দিনরাত উড়ে গিয়ে পড়ে রাস্তার অপর প্রান্তে থাকা ঘনবসতি পূর্ণ এলাকায়। কয়লার দূষণে জেরবার এলাকার কয়েকহাজার মানুষ। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গিয়ে আজ এলাকাবাসীর প্রবল ক্ষোভের মুখে পড়লেন এক পুলিশ আধিকারিক। অবিলম্বে সাইডিং সরানোর দাবীতে ওই পুলিশ আধিকারিককে ঘিরে চলল বিক্ষোভ। ঘটনা বাঁকুড়া স্টেশন লাগোয়া বেলগড়িয়া এলাকার। এক্ষেত্রেও কাটমানির অভিযোগ সামনে এনেছে বিরোধীরা। কাটমানির তত্ব উড়িয়ে পুরসভার আস্বাস দূষণ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাঁকুড়া শহরের ঘনবসতি পূর্ন এলাকা হিসাবে পরিচিত স্টেশন চত্বর। এই স্টেশনের অদূরেই রয়েছে রেলের সাইডিং। একসময় এই সাইডিং এ স্পঞ্জ আয়রনের কাঁচামাল ওঠানামা করত। স্পঞ্জ আয়রনের কাঁচামালের দূষনে জেরবার এলাকাবাসী লাগাতার আন্দোলনে নামেন। শেষ পর্যন্ত এলাকাবাসীর চাপের মুখে পড়ে ওই সাইডিংয়ে স্পঞ্জ আয়রনের কাঁচামাল ওঠানো নামানো বন্ধ হয়। কিন্তু বছর দুয়েক আগে দেখা দেয় নতুন সমস্যা। কোভিডের ডামাডোলের সুযোগ নিয়ে রাতারাতি ওই সাইডিংয়ে শুরু হয় কয়লার কারবার। বড়জোড়া এলাকায় থাকা পিডিসিএল এর খোলামুখ কয়লা খনি থেকে উত্তোলিত কয়লা নির্দিষ্ট একটি পরিবহন সংস্থার ডাম্পারের সাহায্যে সড়কপথে আনার কাজ শুরু হয়। স্থানীয়দের দাবী ওই সংস্থার কয়েকশো ডাম্পার প্রতিদিন কয়লা বোঝাই করে সাইডিং এ এনে জড়ো করে। পরে রেলের রেকে পুনরায় তা বোঝাই করে নিয়ে চলে যাওয়া হয় অন্যত্র। এভাবে কয়লা পরিবহনের গোড়ার দিকে প্রতিবাদ জানান স্থানীয় মানুষ। অভিযোগ সেই সময় পরিবহনকারী সংস্থার তরফে এলাকাবাসীকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় এলাকার কাঁচা রাস্তা পাকা করে তবেই কয়লা পরিবহন করা হবে। দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাস্তায় ও কয়লার গাদায় নিয়মিত জল ছেটানো হবে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতির কোনোটাই পালন করা হয়নি বলে অভিযোগ। এরফলে কয়লা ওঠানো নামানোর ক্ষেত্রে যে কয়লার গুঁড়ো বাতাসে উড়ছে তা গিয়ে জমা হচ্ছে  বাঁকুড়া শহরের আশপাশের  বেলগড়িয়া, কায়তার পাড়া,  আশ্রমপাড়া,  শ্যামদাসপুর,  কমরারমাঠ সহ ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায়। ওই এলাকায় বায়ু দূষণের মাত্রা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে শিশু ও বৃদ্ধদের একটা বড় অংশ শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানির মতো অসুখে আক্রান্ত হচ্ছেন। সমস্যার কথা জানিয়ে এলাকাবাসী বারবার চিঠি দিয়েছেন বাঁকুড়া পুরসভা থেকে শুরু করে স্থানীয় বিধায়ক,  সাংসদ, মন্ত্রী,  কয়লা পরিবহনকারী সংস্থা এমনকি রেল দফতরকেও। কিন্তু কোনো তরফেই কোনো পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ। আজ এলাকায় পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যান বাঁকুড়া সদর থানার এক আধিকারিক। এলাকার মানুষের সাথে কথা বলার সময় তাকে ঘিরে প্রবল বিক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকার মানুষ। স্থানীয়দের দাবী দূষণ এড়াতে নিয়ম অনুযায়ী লোকালয় থেকে দূরে এই ধরনের সাইডিং করার নিয়ম থাকলেও কার্যত গায়ের জোরে কয়লা পরিবহনকারী সংস্থা নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে কয়লা পরিবহন করে চলেছে। অবিলম্বে ওই সাইডিং বন্ধ না করলে আগামীদিনে আরো বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এলাকাবাসী। বিজেপি বিধায়ক নিলাদ্রী শেখর দানার দাবী এক্ষেত্রেও কাটমানি থাকায় পুলিশ ও প্রশাসন নিশ্চুপ। পুরসভার দাবী কাটমানির অভিযোগ মিথ্যা। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY