সাথী প্রামানিক, পুরুলিয়াঃ একদিকে বাবা বেরোলেন শেষ যাত্রায় অন্যদিকে মেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে চোখের জলের বাঁধ দিয়ে বাবার ইচ্ছে পূরণ করতে রওনা দিলেন বিশ্ববিদ্যালয়। বাবার স্বপ্ন পূরণ হল। তারই শংসাপত্র সোনার পদক আনতে যেতে হল মেয়েকে। পুরুলিয়া জেলার বাঘমুন্ডি থানার সুইসা গ্রামের বাসিন্দা সুমনা মুখার্জি। পুরুলিয়ার সিধো কানহো বিরসা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিদ্যায় স্নাতকোত্তর করলেন সুমনা। বাবার ইচ্ছে অনুযায়ী গবেষণা করতে চান। গবেষণার বিষয় নিউক্লিয়ার ফিজিক্স। সর্বোচ্চ নম্বর(৮২ শতাংশ নম্বর) অর্জন করে স্বর্ণ পদক পেয়েছেন। এই খবর বাবা জীবিত থাকা কালীন তাঁকে জানান তিনি। চিকিৎসাধীন বাবা তাঁকে জড়িয়ে চোখের জল ফেলে আশীর্বাদ করেছিলেন। কিন্তু,সোমবার রাত্রি সাড়ে ন’টা নাগাদ চিকিৎসা চলাকালীন পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে মারা যান সুমনার বাবা। শোক চাপা রেখে গুমরে গুমরে কেঁদে উঠছিলেন সুমনা। তাঁর ইচ্ছে ছিল মঙ্গলবার সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শংসাপত্র পদক নেওয়া বাবা চাক্ষুষ করবেন। হল না। সুমনার বাবা সমীর মুখার্জি, মা নূপুর মুখার্জি আর ভাইকে নিয়ে তাঁদের পরিবার। বাবা স্থানীয় তুন্তুরি শিশু মন্দিরের প্রধান আচার্য্য ছিলেন। পঞ্চাশ পেরোতেই জটিল রোগে আক্রান্ত হন তিনি। তার আগে থেকেই আর্থিক টানাটানি রয়েছে পরিবারে। সুমনার ছেলেবেলার পড়াশোনা সুইসাতে কাটলেও। আসানসোল গার্লস কলেজ থেকে পদার্থ বিদ্যায় সাম্মানিক বিষয়ে স্নাতক হন। তার পরই সিধো কানহো বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যান পুরুলিয়া শহরের মেসে থেকে। সব কিছু খরচ যুগিয়েছেন নিজে টিউশন পড়িয়ে। অদম্য জেদ হার মেনেছে সব প্রতিকূলতা। কিন্তু বাবাকে ধরে রাখতে পারলেন না তিনি। “এটাই আমার অসফলতা” বলতেই চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না। তার আগে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আচার্যের বক্তব্য পরামর্শ শিক্ষার্থীদের আসনে বসেছিলেন সুমনা। নাম ঘোষণা হতেই মঞ্চে উঠে হাসি মুখে শংসাপত্র নিলেন। তখন এত টুকু বুঝতে দেন নি যে বাড়ি থেকে বাবাকে শেষ বিদায় দিয়ে এসেছেন। মঞ্চে থেকে নামতেই সতীর্থরা জড়িয়ে ধরতেই এক আবেগ ঘন মুহূর্ত তৈরি হল স্মরণীয় অনুষ্ঠান চত্বর।